প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস
নালী বড়রিয়া কৃষ্ণচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের গৌরবান্বিত ইতিহাস
পদ্মা- যমুনা ইছামতি অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের গর্বের অহংকার ও অবিচ্ছেদ্য একটি জনপদ হিসেবে শত বছর পূবেই নিজেকে স্ব-মহিমায় যে আবিস্কার করতে পেরেছে সে আমাদের প্রাণ-প্রিয় নালী গ্রাম। পার্শ্ববর্তী গ্রাম সমূহের সকল মানুষের সম্মিলনের প্রধান কেন্দ্র বিন্দুতে নিজেকে পরিণত করে এত বড় একটি জনপদের সামগ্রীক নাম ‘‘নালী” প্রকাশে আত্ম প্রত্যয়ী করেছে সকলকে নিঃসন্দেহে। আমরা যেন সবাই একই সূত্রে গাঁথা, যেন সবাই নালী গ্রামের সন্তান। যা হোক বয়োবৃদ্ধ বিজ্ঞ জনদের ধারণা ষোড়শ শতাব্দির মাঝামাঝিতে নদী বিধ্বস্থ চরাঞ্চলে গড়ে উঠেছিল এই জনপদটি। জন্মগত ভাবেই এই জনপদের প্রত্যেক মানুষকে মোকাবেলা করতে হয়েছে মৌলিক চাহিদা গুলো। তন্মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। শিক্ষা ব্যতিত জীবন অর্থহীন ও অসম্পূর্ন। শিক্ষা মানুষকে পূনাঙ্গঁ বিকাশিত করে। আত্ম মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে। ইহা ব্যতিত কোন উন্নয়নই সম্ভব নয়। তাই শিক্ষার বিকল্প নেই। এই মহাসত্য কথাটির যথার্থতা বুঝেই অষ্টাদশ শতাব্দির শেষ দিকে শিক্ষা বিস্তারকে মহৎ কর্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এই অঞ্চলের তৎকালীন কয়েকজন সুশিক্ষিত বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। আর তা থেকেই শুরু হয়েছিল অত্র এলাকার শিক্ষা ক্ষেত্রের গৌরবান্বিত ইতিহাস।
বয়োবৃদ্ধ বিজ্ঞ জনদের তথ্যানুযায়ী অষ্টাদশ শতাব্দির শেষ দিকে এই জনপদে শিক্ষা বিস্তার শুরু হয়ে ছিল পন্ডিতের পাঠশালার মাধ্যমে । তৎকালে গুরুগৃহে অআনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান শুরু করেছিল নালী গ্রাম নিবাসী প্রয়াত বাবু চুনিলাল সাহার বাড়ীতে পন্ডিত সীতানাথ দের পাঠশালা, ত্রিলোচনপট্রি (বড়রিয়া) গ্রামের তৎকালীন সরকারী চিকিৎসক ডাঃ অভয় চরন সরকারের (হর কুমার সরকার) বাড়ীতে পন্ডিত লোকনাথ সরকারের পাঠশালা (তপবন স্কুল) ও ধুতুরাবাড়ী নিবাসী জনাব ছলিমুদ্দিন মোল্লার পাঠশালা। কিন্তু কোন এক সময় পাঠশালাগুলোর নের্তৃত্বদানকারীদের মধ্যে একটু ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এটা বড় আকার ধারন করলে স্থানীয় কয়েক জন বিদ্যুৎ সাহী ১৯১৫ সালে সকল পাঠশালাকে একত্রিভূত করে নালী বাজারের উপর ‘‘ নালী মধ্য ইংরেজী বিদ্যালয়” নামে নতুন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার শুভ যাত্রা শুরু করেন। নবগঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন- বাবু বৈদ্যনাথ চন্দ। সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু কৃষ্ণ গোবিন্দ ঘোষ (কৃষ্ট বাবু)। সহকারী শিক্ষক ছিলেন, বাবু সুরেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী বাবু সীতা নাথ দে, বাবু জলধর দাস, রাধিকা মোহন ঘোষ, প্রমুখ। পরবর্তী সময়ে আরো অনেক শিক্ষক মন্ডলীর নাম এসেছে যেমন, বাবু হেম চন্দ্র দাস, পতিতবন্ধু চক্রবর্তী, বাবু নব কুমার শীল জনাব আব্বাস আলী, মৌলভী আবুল মোস্তফা প্রমুখ।১৯১৯ সালের ১লা জানুয়ারী তারিখে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গের এক সভায় বিদ্যালয়ের প্রথম কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন বাবু হর কুমার সরকার। সর্বসম্মতি ক্রমে প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারী, ও সহকারী সেক্রেটারী নির্বাচিত হয়েছিলেন যথাক্রমে বাবু পার্ববতী চরন চক্রবর্তী, বাবু সুরেন্দ্র মোহন বসু (বি, এল) ও বাবু হর কুমার সরকার। ১১ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন, বাবু হেমন্ত কুমার বসু ( এম, এ, এল, এল,বি), বাবু লালন চন্দ্র দাস, (বি, এল) বাবু বৈদ্যনাথ চন্দ (প্রঃ শিঃ) বাবু ললিত কুমার বিশ্বাস, বাবু কৃষ্ণ গোবিন্দ ঘোষ ( সহঃ প্রঃ বিঃ) ও একমাত্র মুসলমান প্রতিনিধি জনাব মোঃ আরশাদ কাজী। সদ্য এই কমিটির প্রচেষ্টায় ১৯১৯ সালের ১৫ ই ফেব্র“য়ারী তারিখে স্কুলটি পরিদর্শন করতে এলেন তৎকালীন ডেপুটি ইন্সপেক্টর অব স্কুল। তিনি স্কুলটিকে সরকারী অনুমোদন দিতে স্বীকার হলেন কয়েকটিশর্তে যেমনঃ প্রথমত বাজারের উপর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলবেনা, তাই স্কুল গৃহ সত্বর খোলামেলা সুন্দর পরিবেশে স্থানান্তর করতে হবে, দ্বিতীয়তঃ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়তঃ ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। নালী বাজারের দক্ষিণ পাশে ডেপুটি ইন্সপেক্টরের মনোনিত স্থানেই স্কুল গৃহ স্থানান্তর করা হলো। পূর্ব - পশ্চিমে চৌচালা একটি খড়ের ঘর তৈরি করা হলো। পশ্চিম ভিটায় নির্মিত হলো শিক্ষক মন্ডলীদের জন্য লাইব্রেরী কক্ষ। এ ভাবেই স্থায়ী ভিত্তিতে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে ছিল নালী মধ্য ইংরেজী বিদ্যালয়। প্রথমে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পরবর্তীতে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত কলেবর বৃদ্ধি করে “মাইনর” স্কুল হিসেবে দীর্ঘ দিন অত্র অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে শ্রেষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। ১৯২০ সালে ২৯ অক্টোবর তারিখে, ডেপুটি ইন্সপেক্টর সাহেবের পরামর্শে কার্যকরী কমিটি পূনর্গঠিত হয়। কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীন আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট বাবু রায় প্রিয় নাথ বসু চৌধুরী।
১৯২১ সালের ৩১ শে মার্চ তারিখে কার্যকরী কমিটির সভায় অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জানাজানি হয় যে নালী গ্রাম নিবাসী বাবু কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার ১২৯০ সনের ২৬ শে শ্রাবণ তারিখে এক খানা উইল সম্পাদন করে পরলোক গমন করেন । তার উইলের শর্তানুসারে তার গভরমেন্ট প্রমেসারী নোট এবং গোচ্ছিত টাকার সুদ এবং তার ত্যাজ্য সম্পত্তির আয় বা মূল্য নালী গ্রামে প্রতিষ্ঠিত নালী মধ্য ইংরেজী বিদ্যালয়ের প্রাপ্য। অর্থ্যাৎ প্রয়াত কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার মৃত্যুর পূর্বে এমন ভাবে উইলটি সম্পাদন করেছিলেন যে, যদি কোন সময় তার নিজ গ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয় তবে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানি উক্ত সম্পাদিত উইলের মালিক। সভাথেকে প্রয়াত বাবু কৃষ্ণ চন্দ্র সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রর্দশন করে বাবু হর কুমার সরকার কে উইলের আইন অনুসারে প্রবেট গ্রহণ সহ যাবতীয় কার্যসম্পাদন করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়ে ছিল। ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অফিস থেকে প্রাপ্ত কৃষ্ণ চন্দ্র বাবুর উইলের সমুদয় অর্থ উত্তোলন করে কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক উহা মানিকগঞ্জ সেন্ট্রাল কো- অপারেটিভ ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছিল একটি শর্তে, জমাকৃত এই অর্থ ব্যয় হবে ভবিষ্যতে স্কুলটি যখন স্থায়ী ভাবে বেনিফিটেড হবে। প্রয়াত কৃষ্ণ বাবুর এহেন মহানুভবতা সর্বমহলে আলোচিত ও প্রশংসিত হওয়ার এক পর্যায়ে ১৯২২ সনের ১৫ই আগষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের নির্দেশ মতে এবং প্রয়াত কৃষ্ণ চন্দ্র সরকারের উইলের মর্মানুসারে স্কুলের নাম করন করা হয়েছিল নালী বড়রিয়া কৃষ্ণ চন্দ্র ইনষ্টিটিউশন। স্থানীয় অনেকের ধারণা স্কুল স্থাপনের উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগ বড়রিয়া গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় স্কুলের নামের সাথে নালী বড়রিয়া কথাটি সংযুক্ত করা হয়ে ছিল। ১৯২৫ সনে বাবু পার্ব্বতী চরণ চক্রবতী ও বাবু লালন চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে আবার কার্যকরি কমিটি গঠিত হল।১৯৪০ সনে প্রথম প্রধান শিক্ষক অবসরে চলে যাওয়ায় দ্বিতীয় প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন বাবু সুধেন্দু নাথ ব্যানার্জি । এই সময় কার্যকরী কমিটি পূনরায় গঠিত হলে নতুন সদস্য হিসেবে আসেন জনাব কাজী আলতাফ হোসেন, বাবু মাখন লাল দাস, বাবু প্রসন্ন কুমার দাস, বাবু যোগেন চন্দ্র হোড়, বাবু পূর্ণ চন্দ্র গুহ, মৌলভি আবু রাজা মোহাম্মদ। ১৯৪৩ সনে ৩য় প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দান করেন বাবু সতিশ চন্দ্র বিশ্বাস। পরবর্তী ১৯৫৩ সালের ১৯ শে ফেব্র“য়ারী তারিখে ৪র্থ প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদেন আমডালা নিবাসী বাবু জগদীশ চন্দ্র রায়। এ সময় কার্যকরি কমিটির সদস্য ছিলেন, বাবু অক্ষয় কুমার চক্রবর্তী, কাজী আশরাফ হোসেন, আবদুল জব্বার, মনমোহন চক্রবর্তী, সুরেশ চন্দ্র দে। ১৯৫৪ সালে স্কুলটি জুনিয়র হাই স্কুলে রূপান্তর হলে এর নাম করন করা হয়েছিল নালী বড়রিয়া কৃষ্ণ চন্দ্র জুনিয়র হাই স্কুল। তখন প্রাইমেরী শাখায় প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব কাজী আবুল মোসলেম। পরবর্তীতে প্রাথমিক বিদ্যালয় অংশটি নিজস্ব গতিতে চলতে চলতে স্বাধীনতা উত্তর সরকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হয়ে নালী বড়রিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। জুনিয়র হাই স্কুল শাখার দায়িত্বে ছিলেন (জগদীশ বাবুর অনুপস্থিতিতে) বাবু মাখন লাল ব্রক্ষ্ম্রচারী (বি, এস, সি)। পরবর্তীতে বাবু তুষ্টলাল হালদার (ভারপাপ্ত), জনাব সুলতান উদ্দিন আহ্মেদ ও বাবু সত্যেন্দ্র নাথ ভৌমিক (বাদল বাবু) প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ছিলেন বাবু গয়ানাথ দাস, বাবু অশ্বিনী কুমার দাস, জনাব আব্বাস উদ্দিন মল্লিক, জনাব মোঃ মনির উদ্দিন আহমেদ ও বাবু তুষ্টলাল হালদার। ১৯৫৪ সনে শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন সেক্রেটারী বাবু লালন চন্দ্র দাস স্বদায়িত্ব থেকে অবসর নিলে উক্ত পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাবু সুরেশ চন্দ্র দে। ১৯৬৫ সনের ২৬ শে ডিসেম্বর কমিটি পূর্ণঃগঠিত হলে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলেন এস,ডি,ও মানিকগঞ্জ। ভাইস প্রেসিডেন্ট-জনাব আব্দুল হামিদ, সেক্রেটারী জনাব মওলা আলী, সদস্য হলেন জনাব মুন্সি তাহাজ উদ্দিন ও জনাব ওসিমুদ্দিন মোল্লা। জনাব আব্দুল হামিদ সাহেবের পরে জনাব মুন্সি তাহাজ উদ্দিন সাহেব কিছুকাল ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন।
১৯৬৫ সনে ৭দিনব্যাপি স্বগৌরবে পালিত হয়েছিল বিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তী সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে বাবু কৃষ্ণ গবিন্দ ঘোষ (কৃষ্ট) বাবুর পঠিত বিদ্য্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস ও মরহুম আবদুল মোন্নাফ খান সাহেবের গাওয়া গানটি তৎকালীন শ্রোতাদের আজও উদ্দেলিত করে। ১৯৬৬ সনে স্কুলটি পূর্ণাঙ্গ হাই স্কুলে রূপান্তর হলে এর নতুন নামকরন করা হয় নালী বড়রিয়া কৃষ্ণ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় । এই সনের পহেলা জানুয়ারী তারিখে সদ্য উনীœত হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন বানিয়াজুরি নিবাসী জনাব আব্দুর রাজ্জাক সাহেব। এর পরেই কোন এক সময় দীর্ঘ দিনের এই কর্মস্থল থেকে বিদায় নিয়েছিলেন বাবু কৃষ্ণ গোবিন্দ ঘোষ (কৃষ্ট বাবু)। কৃষ্ট বাবু বিদায় নিয়ে চলে গেলেন বটে কিন্তু আজও তিনি অত্র এলাকার মানুষের হৃদয় পটে অবিস্মরনীয় হয়ে আছেন। কারণ এই স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয়া পর্যন্ত তাঁর অসামান্য অবদানের কথা কখনো ভুলার নয়। পরবর্তীতে তৎকালীন ঢাকা ডেপুটি কমিশনার সাহেবের পরামর্শে ১৯৬৬ সনে ১৮ই আগষ্ট ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠিত হয়েছিল। পূর্বের কমিটির সকল পদাধিকারী ঠিক থাকলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্রেসিডেন্ট জনাব কোব্বাত আলী খান সাহেব। ১৯৬৮ সালে ১ম বারের মত অত্র স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা এস,এস,সি পরীক্ষায় অংশনিয়ে ভাল ফলাফল উপহার দিয়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার যোগ্য নেতৃত্বের কারনেই এই প্রতিষ্ঠানটির কোন রূপ ক্ষতি না হয়ে তা আজ এ অঞ্চলের বড় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় এই স্কুলটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল।
মুক্তিযুদ্ধোত্তর যুদ্ধবিদ্ধস্থ বাংলাদেশ পুনর্গঠন শুরু হলো। ১৯৭২ সনের ১৩ই মে স্কুলটির হাল ধরলেন জনাব কাজী আশরাফ হোসেন (রৌশন)। ১৯৭২ সনের ১০ ই জুন প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুর রাজ্জাক পদ ত্যাগ পত্র পেশ করলে তার অনুপস্থিতিতে ভার প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন জনাব আঃ মজিদ তালুকদার। জনাব আঃ রাজ্জাক সাহেব পুনরায় ২০/১২/১৯৭২ ইং তারিখে স্বপদে যোগদান করেছিলেন। উল্লেখ্য বাবু সুরেশ চন্দ্র দে মহাশয়ের পরে অত্র স্কুলের সেক্রেটারী নির্বাচিত হয়েছিলেন জনাব মুন্সী তাহাজ উদ্দিন। স্বাধীনতা উত্তর সরকারী বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক পদাধিকার বলে সেক্রেটারি হবেন বিধায় জনাব আব্দুল রাজ্জাক সাহেব সেক্রটারীর দায়িত্ব পরবর্তীতে বুঝে নিয়েছিলেন। সহকারী শিক্ষক হিসেবে তখনকার সময়ে ছিলেন জনাব মোঃ আফছার আলী, জনাব উমেদ আলী, বাবু হরিপদ চক্রবর্তী, জনাব মোঃ খোরশেদ আলী, বাবু অমল কুমার সাহা, বাবু সুবোধ সাহা প্রমুখ। কার্যকরী পরিষদের সদস্য ছিলেন জনাব মোঃ হাতেম আলী, জনাব আঃ মোন্নাফ খান, জনাব আনছার আলী, বাবু বিনোদ লাল সাহা, জনাব আছির উদ্দিন, বাবু বিমল চন্দ প্রমুখ। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সনের ২৯ শে আগষ্ট কার্যকরী কমিটি পূনর্গঠিত হলে সরকারী বিধি অনুযায়ী সভাপতি হয়েছিলেন তৎকালীন শিবালয় থানার সার্কেল অফিসার জনাব মোঃ জসিমউদ্দিন। ১৯৭৯ সনে ২৩ শে সেপ্টেম্বর তারিখে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন জনাব মোঃ হারেজ উদ্দিন সাহেব। অদ্যাবধী তিনি স্বপদে অধিষ্ঠিত থেকে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে নিরলস পরিশ্্রম করে যাচ্ছেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু নিত্যানন্দ সাহা রায়। তার পরে ১৯৮৯ সনে ৮ ই মার্চ উক্ত পদে যোগদান করেন জনাব ইসহাক আলী মিয়া। তিনিও অদ্যাবধী স্বপদে থেকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সহকারী শিক্ষক হিসেবে ছিলেন বাবু কামনা গোবিন্দ ঘোষ, বাবু সুকুমার শর্ম্মা, জনাব খোরশেদ আলী, বাবু মহিম চন্দ্র শীল, বাবু নৃপতি চরন চক্রবর্তী, মৌলভি আঃ বাতেন, বাবু মনরঞ্জন দে প্রমুখ। পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন শিবালয় সার্কেল অফিসার জনাব এ, জে, এম শহীদুজ্জামান সাহেব, থানা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব নজরুল ইসলাম সাহেব, উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব মুজিব উদ্দিন আহমেদ মন্টু সাহেব। এই সময় গুলোতে সহ-সভাপতি জনাব কোব্বাত আলী খান সাহেব কার্যকরী পরিষদের সার্বিক দায়িত্ব পরিচালনা করে আসছিলেন। ১৯৯০ সনের ৩রা জুন তারিখে জনাব কোব্বাত আলী খান সাহেব কার্যকরী পরিষদের পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। দীর্ঘ দিন এই পদে থেকে ২০০০ সনের পহেলা জানুয়ারী তারিখে তিনি শেষ বারের মত সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। মৃত্যুর পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। তার অবর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন জনাব আজিজুল হক নান্নু সাহেব। এর পর ২০০৩ সালের ৩রা মার্চ তারিখে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন অত্র অঞ্চল তথা মানিকগঞ্জ জেলার কৃতি সন্তান আমাদের গর্ব জনাব আলহাজ্ব প্রকৌশলী খান মোঃ আফতাবউদ্দিন সাহেব। শুরু হল নালী বড়রিয়া কৃষ্ণ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বর্ণ যুগ। মরহুম কোব্বাত আলী খান সাহেবের সুযোগ্য উত্তরসুরী তার বড়ছেলে সুশিক্ষিত, সুপ্রতিষ্ঠিত খান মোঃ আফতাবউদ্দিন সাহেব এই বিদ্যালয়ের হাল ধরার সাথে সাথে বিদ্যালয়ের সার্বিক চিত্র পাল্টে যায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে অনেক। এই সত্য কথাটি এলাকায় আজ সবার মুখে মুখে। বিদ্যালয়ের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে তার আছে প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণ। তিনি মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রবর্তন করেছেন কে আলী খান বৃত্তি । তার অনুদানে নির্মিত হয়েছে কে আলী খান ভবন সেখানে রয়েছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, পাঠাগার কক্ষ, কম্পিউটার কক্ষ ও প্রার্থনা কক্ষ। তার অবদানে নির্মিত মোসাঃ শাহিদাখানম দ্বীতল ভবনটি শুধু গুরত্বপূর্ন একটি অট্রালিকাই নয়, বিদ্যালয়ের শোভা বৃদ্ধি করেছে নিঃসন্দেহে। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, শিক্ষাউপকরণ সরবরাহসহ বার্ষিক সাহিত্য সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, ফলাফল ঘোষনা, পুরস্কার বিতরন, অভিভাবক দিবস, মিলাদ-মহ্ফিল ও সরস্বতী পূজাসহ স্কুলের সকল অনুষ্ঠানে তার আছে প্রত্যক্ষ উপস্থিতি এবং সহযোগীতা। গত ৫ বছর পূর্বে চা�